এখনও কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকেই ঝোঁক বাংলাদেশের

Passenger Voice    |    ০৩:৫৪ পিএম, ২০২৪-০৪-২২


এখনও কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকেই ঝোঁক বাংলাদেশের

দেশের চাহিদা মেটাতে ২০১২ সালের পর বেশকিছু কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। যদিও সেগুলোর বড় অংশই সময়মতো উৎপাদনে আসেনি। এর মধ্যে অর্থায়ন জোগাড় করতে না পারাসহ নানা কারণে ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন বাতিল করা হয় ২০২১ সালের জুনে। এর মাধ্যমে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে অনেকটা সরে আসার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। যদিও বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে এখনও সরে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং সরকারি ও বেসরকারি খাতে বেশকিছু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এগুলো উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এছাড়া পরিকল্পনাধীন রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। গ্লোবাল এনার্জি মনিটরের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বুম অ্যান্ড বাস্ট কোল ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালে উৎপাদনে আসা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা বিবেচনায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর সবচেয়ে বেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে চীনে, যার সক্ষমতা ৪৭ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। যদিও এ সময় দেশটির তিন হাজার ৭০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে গেছে। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ায় গত বছর উৎপাদনে এসেছে পাঁচ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতে উৎপাদনে এসেছে পাঁচ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র।

এ তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিল ভিয়েতনাম। গত বছর দেশটির দুই হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদনে এসেছে। পঞ্চম স্থানে থাকা জাপানে ২০২৩ সালে উৎপাদনে এসেছে দুই হাজার ৫০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ সময় দেশটির ২০০ মেগাওয়াটের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে গেছে। আর গত বছর বাংলাদেশে উৎপাদনে এসেছে এক হাজার ৯০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। পরের অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে গত বছর উৎপাদনে এসেছে এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র।

তালিকায় শীর্ষ ১০-এ থাকা অপর তিন দেশ হলো দক্ষিণ কোরিয়া, গ্রিস ও জিম্বাবুয়ে। এ তিন দেশে গত বছর উৎপাদনে এসেছে যথাক্রমে এক হাজার, ৭০০ ও ৩০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া গত বছর নতুন করে উৎপাদনে না এলেও, ১১টি দেশের বেশকিছু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে গেছে। এ তালিকায় শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ৯ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে গেছে গত বছর।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের তিন হাজার ১০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে গেছে। আর তৃতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ার দেড় হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে গেছে ২০২৩ সালে। এর বাইরে রাশিয়ার ৭০০ মেগাওয়াট, ইতালির ৬০০, পোল্যান্ডের ৫০০, রোমানিয়ার ৩০০, ফিনল্যান্ড, সেøাভাকিয়া ও চিলির ২০০ করে এবং কানাডার ১০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বেরিয়ে আসার কর্মপরিকল্পনা নিলেও, কয়েকটি দেশ নতুন করে এ খাতে বিনিয়োগ করছে। নতুন নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও নির্মাণ করা হচ্ছে দেশগুলোয়। এছাড়া পরিকল্পনাধীন বা অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও বেশকিছু কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিকল্পনাধীন ও নির্মাণাধীন কয়লাবিদ্যুতের সক্ষমতার দিক থেকে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে চীন। দেশটির ঘোষিত, অনুমোদিত বা প্রাক-অনুমোদিত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা দুই লাখ ৬৭ হাজার ৯০৩ মেগাওয়াট। আর বর্তমানে চীনের নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা এক লাখ ৩৯ হাজার ৭৯৪ মেগাওয়াট। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের ঘোষিত, অনুমোদিত বা প্রাক-অনুমোদিত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ৪৬ হাজার ৩৩ মেগাওয়াট এবং বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে ৩০ হাজার ৭১০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্র।

তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ার ঘোষিত, অনুমোদিত বা প্রাক-অনুমোদিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ছয় হাজার ২২০ মেগাওয়াট এবং নির্মাণাধীন রয়েছে ৯ হাজার ৪৩৫ মেগাওয়াট। চতুর্থ স্থানে থাকা বাংলাদেশের ঘোষিত, অনুমোদিত বা প্রাক-অনুমোদিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা সাত হাজার ২২০ মেগাওয়াট এবং নির্মাণাধীন রয়েছে তিন হাজার ৯০০ মেগাওয়াট।

এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে জিম্বাবুয়ে। দেশটির ঘোষিত, অনুমোদিত বা প্রাক-অনুমোদিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ছয় হাজার ৪৯০ মেগাওয়াট এবং নির্মাণাধীন রয়েছে ৬০৫ মেগাওয়াট। এছাড়া লাওসের ঘোষিত, অনুমোদিত বা প্রাক-অনুমোদিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা পাঁচ হাজার ৩৭৬ মেগাওয়াট এবং নির্মাণাধীন রয়েছে ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্র। পরের স্থানে থাকা কাজাখস্তানের ঘোষিত, অনুমোদিত বা প্রাক-অনুমোদিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা পাঁচ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট এবং নির্মাণাধীন রয়েছে ১৯৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্র।

তালিকায় অষ্টম স্থানে থাকা তুরস্কের ঘোষিত, অনুমোদিত বা প্রাক-অনুমোদিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা চার হাজার ৮০৮ মেগাওয়াট এবং নির্মাণাধীন রয়েছে ১৪৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্র। নবম স্থানে থাকা পাকিস্তানের ঘোষিত, অনুমোদিত বা প্রাক-অনুমোদিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা চার হাজার ১০ মেগাওয়াট এবং নির্মাণাধীন রয়েছে ৭৩২ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্র। আর দশম স্থানে থাকা রাশিয়ার ঘোষিত, অনুমোদিত বা প্রাক-অনুমোদিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা চার হাজার ৩৮০ মেগাওয়াট এবং নির্মাণাধীন রয়েছে ২৮৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্র।